Saturday, August 11, 2018

অনুবাদ কবিতা শ্রীজাতা গুপ্ত






ইউগ্যান্ডা এবং যুক্তরাজ্যের উঠতি কবি-লেখকদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয় আফ্রিকান রাইটার্স ট্রাস্ট এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউগ্যান্ডা-র যৌথ উদ্যোগে৷ এই ওয়ার্কশপ চলাকালীন রচিত বিভিন্ন কবিতা এবং ছোটগল্প একত্রিত করে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় 'সুবি' পত্রিকা৷ বাংলায় অনূদিত এই কবিতাগুলি সুবি পত্রিকা থেকে ধার করা৷ মূল কবিতাগুলি ইংরিজিতে রচিত৷ মূল কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখানে তুলে দেওয়া হল, সুবি পত্রিকার লেখক পরিচিতি অংশ থেকেই৷



চুরাশি-তে

বাসা ছেড়ে উড়ে গেছে দাঁত।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থে জমে ওঠে ধুলো
তোমার স্পর্শ চাওয়া নীরব রেডিও
নার্সের পোষাক, পর্দা, সব ফিটফাট।
বাটিতে আরশোলার স্যুপ অবগাহন
আবছায়া ক্ষুধাটুকু নিমেশে রং হারালো
হাঁটবার লাঠি ফুঁড়ে নক্সী মাকড়ের জাল
দ্বিতীয় শৈশব, রোদে বসা শান্ত জীবন।
দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে গমগমে স্বর স্তিমিত
বাজপাখি দৃষ্টির ধিকিধিকি আগুন মৃতপ্রায়
অবয়বে ছায়া ফেলে দিনশেষে সুয্যি ডুবে যায়
পেশিময় দেহখানি গমপেষা ময়দার মত।
তোমার বাগান থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেছে হাসি
এতকাল দৃঢ় হাত বাঁচালো আমায়, তা' কই?
বয়সের গা বেয়ে নি:শব্দে আগাছা জড়ালোই
জট বাঁধা এ জন্মে বিমূঢ় লতাগুল্মরাশি
পোকায় কেটেছে শাল, হাওয়া দেয়, মৃদু দুলে উঠে
চোখ ছেপে জল আসে, গলা ভার রাগে অভিমানে
চিরহরিৎ তুমি, এ কথা সকলেরই জানা
মেহগনি কখনও কি পাতার পোশাক খুলে রাখে?

(মূল কবিতা: “At 84” 
কবিঃ Sophie  N.  Bamwoyeraki)
 [সোফির জন্ম ইউগ্যান্ডার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বারারা শহরে৷ মাকেরেরে ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর সোফি বর্তমানে কাম্পালা ইন্টারন্যাশন্যাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন৷ সেকেন্ডারি স্কুলের পাঠ্যবই লেখার পাশাপাশি সোফি কবিতা এবং ছোটগল্প লিখেছেন৷ এই মুহূর্তে সোফি  তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন৷]


জীবন ও  মরণের

          মৃত্যু আসে
তবু,    হৃদয়ে প্রশ্বাস
          বাকরুদ্ধ
তাও,  অন্তরে ধ্বনিত হয় স্বর
           দৃষ্টিহীন
দেখি,  তৃতীয় চোখে চেয়ে বাহির
           নিশ্চল, স্থবির
আমার, চনমনে স্বপ্নে, বহুদূরে
           মৃত আমি,
তবু,
      মরে গিয়ে বেশ বেঁচে আছি

(মূল কবিতা: “I  Died  Alive” 
কবি: Harriet  Anena)
[লেখক-সম্পাদক হ্যারিয়েটের জন্ম উত্তর ইউগ্যান্ডার গুলু শহরে৷ ২০১০ এ মাকেরেরে ইউনিভার্সিটি থেকে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে বিএ পড়াশোনা শেষ করে হিউম্যান রাইটস বিষয়ে এমএ করছেন হ্যারিয়েট৷ ২০০১ সালে তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবিতা 'The Plight of the Acholi Child' দিয়ে লেখালেখির শুরু৷ যুদ্ধকালীন পরিবেশে বেড়ে ওঠার প্রভাব হ্যারিয়েটের লেখায় লক্ষণীয়৷ ]


(পূর্বের) নাইভাশা দিনগুলি

গরম ও মাছি থেকে বাঁচার যুদ্ধ ছিল আমাদের
গুলিবিদ্ধ খড়ে ছাওয়া বাসায়
দুধ-মধুর স্বপ্নের দিন ছিল আমাদের
যা ছিল, তাই ভাগ করে দেওয়া গেরিলা শক্তিকে 
তাদেরও ছিল বিভিন্ন স্বপ্ন৷  প্রচেষ্টা৷
স্বল্প সম্বলে বেঁচে থাকবার৷
টায়ারের জুতোজোড়া, দানের, বা ছিনিয়ে আনা জামা।

এরপর শান্তিচুক্তি সই। আমরা সকলে মিলিতি হই।
হ্যাঁ! মৈত্রীবন্ধন হয় দোঁহে: সেনাবাহিনী ও মানবে।
আমরা সেজে উঠি পাখির পালকে;
উৎসবে নাচ, গান, অট্টহাসি, আমোদে
জলখাবার, সবই একসাথে
স্বাস্থপান উল্লাসে আত্মার শান্তি কামনা করি
ব্যর্থ, বিস্মৃত নায়কের।

সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসীন এখন
মস্ত গাড়ি ছোটে আমাদের ধূলাপাত্রে।
বেহিসাবি সম্পত্তি সাঁতরে বেড়ায়
গরমে রেহাই দিচ্ছে এসি
বিলাসবহুল, সুসজ্জিত 
বাংলো-প্রাসাদ৷

আমরা আজও মাছি তাড়াই, দমবন্ধ গরম হাওয়া তাড়াই
ঘিঞ্জি টিনের ঘরে। 
মাথার উপর ছাদ গেছে। উধাও জানলা, ঘুলঘুলি।

আমাদের পুর্ব-উত্তর নাইভাশা দিনগুলি।
(মূল কবিতা: “Pre-Naivasha  Days” 
কবি:  Emmanuel Monychol)

উভয়সঙ্কট

নদীতীরে হাঁটলে
কল্পনায় গাঢ় চোখ দেখি
ছোট মাছ সুনীলসাগরে
কুমীরের শিকার সংগ্রাম
হিপোপটেমাস
গভীরে

রাত্রির প্রতীক্ষায়
প্রিয় ক্যালিপ্সো উঠে আসে
ফুরফুরে পোষাকে
গান গায়,
সামলায় কলস।

আমি তাকে ডাকি, প্রীতিবিনিময়ে
কলস ভেঙে যায়,
ঘাসজমি ভাসে বন্যায়
অনিচ্ছুক আগাছার দল নদীবুকে ভাসে।

ক্যালিপ্সো বলে ওঠে: "বাবা!
ওই দেখো, ধর্ষক আমার।"

দানবীয় দু'হাত গলা চেপে ধরে
উর্দিধারী মানুষ আমায় হাতকড়া পরায়।

বছর তিনেক পর
হাতবাঁধা দানব
চিঠি লিখে জানায়
আমার কাছে শুধু
প্রতিশ্রুত উত্তরাধিকার চায়।

(মূল কবিতা:   “Dilemma” 
কবি: Emmanuel  Monychol

[দক্ষিণ সুদানের টোঞ্জ শহরতলীতে জন্ম ইম্যানুয়েলের৷ যুক্তরাজ্যে মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের ছাত্র ইম্যানুয়েল তাঁর পড়াশোনার বাইরের সময় লেখালেখি করেই কাটাতে ভালোবাসেন৷ তাঁর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছদ কোয়ানি ট্রাস্ট এবং স্টুডিও ইদ্রিসিয়া থেকে৷

সেই রাতেই

গদগদ নোটের বান্ডিল ঝলসিয়ে
রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল আমায়
প্রতিদিনের দিয়েছিল আদর আশ্বাস৷
দেখিয়েছিল তার সুবিশাল দূর্গ
বলেছিল, 'থেকে যাও'।

সেই রাতে
ভুলেছিলাম আমার গালে ব্রণ
মনে ছিল শুধুমাত্র
গালে টোল পড়া খুশি
আর, প্রতিরাতের পাওনা আদর।

সে রাত্তিরে
ঢেউ তুলে ওর শরীর
পলিমাটি
নরম হাত
শিহরিত চুমো৷
উষ্ণ লেপের চেয়েও ঢের  বেশী

সেই রাত
বদলে গেল৷ দ্রুত৷
ধারালো কাস্তের কোপে
ছিটকে পড়েছিলাম
পারিশ্রমিক নয়, হাতে গুঁজে দিয়েছিল একগুচ্ছ কাঁটা।

রুদ্ধশ্বাসে ছুটেছিলাম
জীর্ণ আমি,
প্রার্থনায় আমি,
প্রতারিত, শঙ্কিত,
আমার সেই রাতে।

(মূল কবিতা: “That Same  Night” 
কবি: Elone  N.  Ainebyoona)
[ইলোন ইউগ্যান্ডার রাষ্ট্রীয় এনজিও ফোরামে কর্মরতা৷রুনিয়াকিটারা এবং ইংরিজি ভাষায় কবিতা লেখা ইলোনের শখ৷ এই মুহূর্তে তাঁর প্রইথম কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি নিয়ে ব্যস্ত ইলোন নতুন লেখার স্বপ্ন দেখেন৷]

No comments:

Post a Comment

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...