শ্রমণকাহিনি
প্রণালী
উপাসনা পেতে বসি।
চারপাশে বেজে ওঠে শাঁখের করাত। জলে ডুবে গেছে সাঁকোপথ। ফেরাতে বিপুল বাধা। আশেপাশে
কেউ নেই। আজন্মের কথা ভেঙে, বুনো কুকুরেরা ফিরে গেছে ঘরে। একা একা চাঁদ হাসে।
রোজকার বাজারের ফর্দ হাতে, নিমফুল, বুঝে নেয় সরিষার ক্ষেত, কার শোক হলুদ ফুলের চোখ
হয়ে জ্বলে ওঠে!
তপস্বিতা
আচমন শেষে ঘরে ফিরি। হাতে লেগে আছে পোষা হুইসিল।
সমস্ত স্মরণ শেষে অভিযোগে ভরে ওঠে ডালাপালা। আধসেদ্ধ চাল। ভাতের জড়ত্ব ভেঙে, তুমি
হেঁটে যাও। দুলে দুলে থেমে যায় বিরহ বাগান। কাছে এসে বসে একা। তথাগত হে! জাগ্রত
চোখে সেদিনই কেঁদেছিল বিস্তৃত, প্রথম লুম্বিনী উদ্যান।
রুক্ষতা
সমস্ত নক্ষত্র ফুল
চুপচাপ পথের আড়ালে; অক্ষম ক্রোধের মত কেঁপে কেঁপে ওঠে। খাল বয়ে ঢুকে পড়ে গভীর
কুমীর। কেঁপে ওঠা সেই ঘরদোর, তোমার সম্মুখে নতজানু হয়ে থাকে। তুমিও নিমর্ম, বলে
যাও একা রাজপথ, বেড়ার আড়াল; নিরর্থ চাওয়ার পাশে বেড়ে ওঠা জাতকের বংশপরিচয়! জ্বরের
শহরে মেশে রূপোর ঘুঙুর। তবুও দু'চোখ মৌন, কূটাভাস সমর্থন লোভে বরামুদ্রা ঈষৎ হেলে
পড়ে। একেই কী নাম দেবে মৃত্যু? তথাগত!
হিংসা
তবুও শহর মৃত, চারপাশে খোল-করতাল;
আঙুল ছুঁইয়ে রাখে গোপন ছায়ায়। ব্যাকলিটে লেখা থাকে সহস্র বছর। নাম ধাম। পিতৃ
পরিচয়। কোন্ পথ শেষ তক বেঁকে গেছে সমুদ্রের দিকে! কোথায় বা পড়ে আছে ভাঙা
বৌদ্ধস্তুপ; একা অথচ নির্জন। সাধনার ছলে রোজ রাজা রাজা খেলে । দুইহাত ভরে আছে
ভাইয়ের রক্ত; ক্রোধ; রাজনীতি। ধীরলয়ে ততদিনে জুগুপ্সাও বেজে ওঠে আমবনে।
মায়া
ঘুমন্ত দুপুর এই,
ডাহুকের শব্দ ভেসে আসে দূরে। লোকালয় পাওয়া যাবে ভেবে, তুমি দৃঢ়। আরও সাবধানী হয়ে
ওঠ। গেরুয়াবসন ছেড়ে পরে নাও রাজবেশ। শমীবৃক্ষ থেকে নামে প্রকৃত সানাই। এই শেষবার
ভেবে ক্ষমা জেগে ওঠে। সুজাতা দাঁড়ায় এসে, নম্রচোখ; কানে
বাজে অস্ফুট স্বীকার, ঘরে আজ সন্তান অভুক্ত আছে! যেতে হবে।
উপেক্ষা
পথ রেখা ফুটে ওঠে। এই
পথে ফিরেছ নিশ্চিত। ছায়া কাজ! মন্ত্রগানবই আর অধিক পথিক; মৃৎকলসের গায়ে লেগে আছে
হিমজল। জনপদ, মৃতখুলি দেখে ভয় পায়। শিউরে উঠেছে পাকা ধান। তুমিও নির্বাক; ছায়া ছবি
ভেবে আলো তুলে ধরো! কত জন্ম কথা নেই। ভাব-ভালোবাসা নেই। তবুও তবুও...
প্রবিবিক্ততা
রঙিন পালক পরে ওরা
যাতায়াত শুরু করে। চারপাশে ধোঁয়া আর বিষাক্ত বন্দুক। ফিসফিস স্বরে জেগে ওঠে
প্রফুল্ল ফড়িং। তল্লাশির দৃশ্য চোখে; কেঁপে কেঁপে ওঠে চাতকের গান। সাইরেন বাজে।
তোমাকে ঘুমাতে দেবে না এই লোকগান; সামাজিক জল। নিয়ম ভাঙার ছলে তুমিও হারাও; ভীতু
হরিণের মতো দিগন্তের দিকে। পথভ্রষ্ট; পথভ্রান্ত!
পথ
পুরনো দিনের দিকে ফিরে
ফিরে যাই। ভাঙা রেলপথ। শ্যাওলায় জমেছে দেখো মেঘের কলস। তারও নীচে বেজেছিল শহরের
সমস্ত জানালা। ঘরদোর। শুনশান, একা হেঁটে যাও। কেউ নেই। অথচ এ দাগেই এসেছিল বুনো
শূকরের দল। এ পথেই পড়েছিল জ্বরের শরীর। পায়েসের বাটি হাতে দাঁড়িয়েছিল সে ক্ষুধা।
বাসমতী চাল। অভিমানে তুমি শুধু হেঁটে যাওয়া টুকু লিখে গেছ-- যাতায়াতে রহস্যজনক।
একাত্ম
ভীড় বাড়ে। শহুরে বিছানা
ছেড়ে আমি উঠে যাই। চারপাশে এঁকে রাখি কাজল, নজরটিকা। মগ্ন আঙুলে ভাসে মেঘগর্জনের
সুর। প্রাচীন সমাধিচিহ্ন ভেসে গেছে জলে। তুমিও আজব, চুপিচুপি ঠোঁটে রাখো চাপা
তর্জনীর রেখা। ফিসফিসে স্বরে বল-- এ প্লাবন, এই ইশারাতে একদিন মৃতরূপে চিহ্নিত
হবে।
জাগরণ
দানা ঠোঁটে ঘুমিয়ে
পড়েছে পোষা পাখি। ছায়া কারুকাজ ভরে গেছে খড়ের চালায়। এ দুপুর রোজ আসে। সোহাগের
গল্প নিয়ে নিষাদ বালক, মৃদু হাসে। পাখি ঘুম চোখে দেখে, বহুদূর থেকে হেঁটে আসা
স্রোতের সহজ সুর। হাত পেতে বলে-- জল দাও। অথচ নিবিড় ঘুম, অথচ রঙিন সেই পালকের ডানা
সাবধানী চোখ-- বারবার নিষেধের তীর ছুঁড়ে। ঘুমন্ত ডানায় শুধু বাজে-- ধানশূন্য মাঠে
কারা উৎসব পেতেছে!
সবগুলো খুব ভালো। শব্দ ও ছন্দে মুগ্ধতা
ReplyDeleteভালোলাগা
Deleteঅন্য অভিজ্ঞতা! মুগ্ধতা আবারও।
ReplyDeleteআপনাকে আবারও ধন্যবা। আন্তরিকতার সহিত। ;)
Deleteদারুণ । শিক্ষণীয়
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteগভীর অনুুভবের কবিতা।।।।
ReplyDeleteEkatm khub bhalo laglo.
ReplyDeleteValo laglo Baby. Tumi ki Kolkatai thako? A,i boimelay thakbo ar thakbo puro February.
ReplyDelete