গুণ্ঠন
গুণ্ঠন সবই আলেয়ার মতো। কোথায় সেই
তপ্ত–কাঞ্চন গিরগিটি? মরুজাহাজের দিকে দ্রুত যাই, আরো দ্রুত। কোথায় সেই পরলোক চর্চাকারী
কোথায় দেবদূত আট-সহস্র মৃত সৈনিক কোথায় - রোদের তরল সুখে গাছগুলো হাওয়ায় ঝলকায়।মুহূর্ত ঝরে গেছে হর্ষধ্বনির ভিতর অন্ধকারের
ভিতর অবোধ্য সংগীতের তালে তালে! উপচারে ফুলে ওঠে হৃদয়!
নুড়ি পাথর জলের অতলে তুমি থেকো
– কুমারী মেয়ের মতো স্বপ্নের মতো দূরে দূরে। দরজা খুলে দাও – দূরান্তের উপকথা আমরা
এনেছি চোখে চোখে। দরজা খোলো। জোনাকিরা পথ চায়। চায় নদী, সেতু। তোমার ভিতর অবধি,
বুকের গভীরে সেই তপ্ত আঁচিল থেকে আজও ধোঁয়া ওঠে।
গুণ্ঠন সবই আলেয়ার মতো
কেন ঢাকো
কারাগার
বর্ণলিপি ছোঁয়া দিন। ‘সত্বর
ঘুমের মধ্যে প্রবেশ করো’ - একটি প্রাচীন কণ্ঠে ক্রোধ ঝরে পড়ে। উড়ন্ত বেলুনগুলো যেই দেশে যায়, সেখানে তোমার বাড়ি - আমি কারাগারের বৃদ্ধ বন্দিকে জিজ্ঞেস করি। এইভাবে লুকোনো
থাকে মৃত পাংশু হাড়গোড়গুলো নিজের ভেতর।
হয়তো দরজা খোলা ছিল, হয়তো
ব্রহ্মাণ্ডের নোনা ছাদ থেকে ঝরেছিল নীলিমার ধারা, অচেনা মাস্তুল হয়ে কেঁপে উঠি দিক্ভ্রমে। মসৃণ ঝন-ঝন করে বাজে পায়ের শিকল। তোমার করতলের উঁচু গম্বুজ, স্রোতে-ভাসা নদীরেখা, দূরন্ত গাংচিল... কী মিনারের দেশ ছিল একদিন, এখানে পর্যায়ক্রমে শান্তির পতাকা থেমে থেমে উড়েছে প্রতিটি রক্তপাতে। ওই
ঝুলন্ত তরবারি
তুমি
স্নিগ্ধ ফলাটির পাশে হাসিমুখে দেখেছ আবার। ভোরের বাতাস থেকে মিহি ধুলো ওড়ে
ছবি
ছবির মতো রাত্রিদিন। আমি খুঁজি সেই অচেনা থামগুলো।
হয়তো উন্মুখ তার অলক্ষ নিশান। চারিদিক প্রণয়রাতের মতো আপাতস্তব্ধ। ছবি আঁকা চলছে
অথচ, সিঁথির মতো
নদনদী - গুচ্ছ জোনাকি, রঙিন পারাবার। জোনাকির প্রায়ান্ধ শকট সারারাত কত দূর ছুটে যায়। বালকের
আঁকিবুকি তুচ্ছ করবে তাকে - এই ঋতুস্নাত কাল
মুছে দিতে দিতে
ক্রমশ
জলছবি
বেহুলার পট
অচেনা যৌবন তার - সন্তর্পণে, আহত স্তপতি যেন, হাঁটু গেড়ে বসে
আমাদের বাড়ি
যেখানেই পৌঁছোও, তোমারই ভিতরে।
দরজা খোলাই থাকে। বন্ধ ভেবে যেন ফিরে যেও না। আমাদের বাড়ি জুড়ে আমরা চেয়েছি এক
সূর্যাস্তের দেশ। একটা নদীও থাক, নদী চেনে তোমার যৌবন। তুমুল নগ্নতা থাক, থাক চর,
অনেক পাথর। ওপারে দীর্ঘ বন, ঝাউপাতা, বিমুগ্ধ সরণি। এবার ডুয়ার্সে যত বিনিদ্র শৈশব, আমাদের দেশে নেই। এসব পাগলামি থাক।
সবশেষে থাকো বিপন্নতা। তুমি তবু গান হও, আমি তবু দুলি ঝাউপাতা। সেগুনমঞ্জরি যেন অর্ধেক প্রণয় চুরি করে, হাওয়াকে পড়তে দেয় খোলা চিঠি, আকাশপাতাল উড়ে
উড়ে। দেখো ভেবে - দৃশ্য শুধু অর্ধসত্য, আধখানা তোমার ভিতরে। দুয়ে মিলে বাড়ি-চর খুঁজি চলো কবিপক্ষ জুড়ে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন সূর্যের রমণী
আলো নিভে গেলে তার
হঠাৎ সে-বাড়ি
ভেঙে যায়
শীতকাল সম্পর্কিত
সে তো পাখি! স্থির থাকে কীভাবে
সে? হলুদ শাড়িতে তাই বারোমাস এ-ডাল ও-ডাল। মাঝে মাঝে সুর তোলে, দুলে দুলে ওড়ে।
বিপুল জঘন নয়, মহাকবি কালিদাস যতই লিখুন - সুমিত পুচ্ছটি তার ঘোরানো আঁচলে অভিরাম। আমি তার কথা ভেবে শ্লোক লিখি, রঙিন লিপির মোহে কত রাত জাগি। চোখের আড়াল হলে আগ্রাসী দোয়াত ভেঙে দূরে ছুটে যাই –
কত-যে তারার রাত! বাঁধের পাথর
ফেলে হৃদয়ের তীরে
সমস্ত মাঘের শীতে ব্যালকনি
ধরে
হাঁটি হাঁটি
হাঁটতেই থাকি। ঝিঁঝি বলে ‘ধী ধী’। পোকাপতঙ্গেরা গুঞ্জন ছড়ায়। ভয়ের উপরে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি দেখে, যদি সে ফেরে
চিঠি
একটার
পর
একটা অন্ধ মোড়। যেকোনো সময় যেন শীর্ণ রাত্রি ভেঙে তছনছ
হবে। তবু ভয়। লতাগুল্মের মতো অশ্রুসজলতা ডাকবাংলোর মাঠে। গত বৃহস্পতিবার শেষ চিঠি এসেছিল
একাকী এতটা পথ চড়াই-উতরাই পায়ে বাঁধা একশোগোছা শেকল তবু আমি প্রতিবার চেয়েছি সেই নশ্বর তুফান তোমার। হঠাৎ নিস্তব্ধ এত তুমি কি কোথাও বজ্রবিদ্যুৎসহ ফিরে গেছ?
কোথায় কলম তোমার
দু’মুখো নিবের সেই গণ–প্রতিবাদ
আরও চিঠি
সকাল থেকেই
পাখিদের মধ্যে
রেষারেষি। তবুও সরল করেছে ওরা আমাকে, উড়ানের মতো আপাতসরল
আর কী-বা আছে! আজও ভোর থেকে আমি তার দেখা পাব বলে বসে আছি। বারান্দায় হাঁটার লাঠিটা তিনবার
চারবার
হাওয়ায় আছড়ে পড়ে ডাকে আমাকে। কাঠগুদাম এক্সপ্রেস কত
রাত্তিরে যেন লালকুঁয়া পৌঁছোয়? পর পর সেতুগুলো এবার সাদাটে-নীল জলের ঠোঁটের কাছে রং ঢালে। এ-যাত্রায় যদি নাও যাই
তোমার চিঠির মুখোমুখি আমাদের শহরতলির সব কানা
বাসস্ট্যান্ড
রেট্রস্পেক্ট
কাচের এপার থেকে তোমার জীবন
গোধূলিবেলায় দাঁড়িয়ে থাকে। তুমি হাত-পা নাড়িয়ে ছেলেকে বকছ অথবা অ্যাসপিরিন গুলে
নিলে জলে - আমিও কি গ্রহান্তরের জীব নিজেকে বলেছি কত কাছে ডেকে তবু সে শোনে না।
এইসব মাইলস্টোনগুলোর নীচে
আজীবন দাঁড়িয়ে থাকে
ধূসর দূতের মতো, সেফটিপিন দিয়ে খুঁটে তোলে
আজন্ম তিলের ঋণ – কাচের এপার থেকে নক্ষত্রমণ্ডলী যেন বয়স্ক কফিন। গান শুরু হয়
রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যায়, রঁদ্যার শিল্পীজীবন বায়োস্কোপ
হয়ে ফিরে আসে ফিল্ম ফেস্টিভালে, প্রজ্ঞান ঝরে পড়ে
বালজাকের মূর্তি থেকে, বদলে বদলে যায় সাহিত্যমেলার ঠিকানা
তবু স্থির অনাবিষ্কৃত কত অতল পঙ্ক্তিমালা পেরোতে পারে না কলকাতার অলিগলি ...
কাচের এপার থেকে ধূসর দূতের মতো মফস্বল দাঁড়িয়ে থাকে গলিত পেন্ডুলাম নিয়ে
উৎসব
বেহালা বাজায় যারা, তুমি জানো ? কোনো কৃতবিদ্য মানুষের
কাছে যেতে পারিনি - যেন বেতালা নুড়িপাথর এক দূর পাহাড়ের অবহেলা থেকে অন্যমনে
ঝাঁপাতে
ঝাঁপাতে ঝোপজঙ্গলের মধ্যে হারাতে চলেছি। তবু স্বপ্নে শুনি
ছড়িটান, বাদকের মুখ অচেনা হাওয়ার পরতে ক্রমশ প্রাচীন যোদ্ধাদের মতো সংকল্পকঠিন।
ভয়ে থাকি যদি চোখ মেলে চায় তারা,আমার সম্মিলিত শূন্যতা তুলে দিয়ে দেখে ? তুমি কি
চাইছোনা আজ গান হোক, অচেনা বন্দর থেকে বসন্তহাওয়ার মতো পাক খেয়ে সুর ভেসে আসে
আমাদের নিভৃত পল্লিতে ? কুয়াশার চাদর
ছিঁড়ে অরণ্যে হঠাৎই কেঁপে ওঠে উৎসব
সুখী মানুষের ছবি
ব্যথার আড়ালে চলে গেছ তুমি
নিজেকে খুঁজতে। ক্যারামের ঘুঁটিগুলো এ-কোণ ও-কোণ থেকে তুলে নিয়ে মুছে দিলে
অস্ত্রোপচরারের সমস্ত চিহ্ন। কফিটেবিল থেকে এইসব দেখি আমি বিদ্যুৎবেগে পর্দা সড়িয়ে
এক-একবার শীতল ঝরনাগুলো দেখে পিছিয়ে আসি। ঘণ্টাঘরে ছোটো বড়ো কত ঘণ্টা দুলছে তুমি থামাতে
মরিয়া, আমার কি এইবার কিছু একটা করা উচিত ? তুমি তো ডাকোনি অজস্র মৌচাক
থেকে ক্রুদ্ধ মৌমাছিরা খুঁজে নেবে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। বিবশ বৃক্ষের মতো এক
কোণে থমকে থেকেছি তারপর কতদিন। ডেকে নিতে ভয় হয় অভ্রখনি থেকে আমি এত দূরে আজ ! একেকবার জোরে হাওয়া
দিলে দেওয়ালে কত যে সুখী মানুষের ছবি কেঁপে ওঠে
No comments:
Post a Comment