Sunday, August 12, 2018

কার স্বাধীনতা? কার দিবস? : হিন্দোল ভট্টাচার্য





ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম। ভিনগ্রহের প্রাণীরা বুঝতে পারছে না মানুষ বুদ্ধিমান ও সভ্য প্রাণী, না নয়। বুঝতে না পেরে, তারা মানুষকে বন্দী করে রাখে। সেখানে একটা প্রাণীকে মানুষ বন্দী করে আর পোষ মানিয়ে ফেলে। সেটি দেখে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা বুঝতে পারে যে মানুষ বুদ্ধিমান। কারণ একমাত্র বুদ্ধিমান ও সভ্য প্রাণীরাই অন্য প্রাণীদের পোষ মানাতে পারে, বন্দীও করতে পারে। গল্পটি সাধারণ। হয়ত পুরনো কথাও। কিন্তু বারবার মনে পড়ে গল্পটি। মানুষের এই পোষ মানানো এবং বন্দী করার প্রবৃত্তি তো কেবলমাত্র অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেই নেই, মানুষের ক্ষেত্রেও আছে। যত বেশি বুদ্ধি, তত বেশি ক্ষমতা - এই সাধারণীকরণ হয়ত করা যাবে না, কিন্তু এ কথা বলাই যায়, যত বেশি ক্ষমতা, তত বেশি অন্যের উপর অধিকার বিস্তারের ইতিহাস মানুষের ইতিহাসের এক বৈশিষ্ট্য। যতদিন পর্যন্ত মানুষের কোনও রাজনৈতিক কাঁটাতারের দেশ-বিদেশ ছিল না, তখনও মানুষের এই বৈশিষ্ট্যই মানুষকে ক্রমশ তথাকথিত সভ্য করেছে, ক্ষমতাবান করেছে। যাযাবর থেকে মানুষ হয়ে উঠেছে সাম্রাজ্যবাদী। কথা হল তাহলে দেশ কী এবং স্বাধীনতাই বা কী?

আমাদের পাড়ায় একবার এ কথা বলে ফেলেছিলাম বলে, এক বৃদ্ধ আমাকে বলেছিলেন- জানো না তো ইংরেজদের অধীনের থাকার যন্ত্রণা, তাই এ কথা বলতে পারছ! আমাদের এই দেশ স্বাধীন বলেই এত স্বর। এত কথা বলার ক্ষমতা। হত যদি পরাধীন দেশ, দেখতাম এত স্বর কোথায় যেত! আমি জানি না, তিনিও ইংরেজ আমলে ছিলেন কিনা, তবে হ্যাঁ, ইংরেজরা তো ভয়ানক শাসক ছিল, এ কথা সত্যই। তাদের আমলে আমরা তুমুল পরাধীন ছিলাম, এ কথাও অনস্বীকার্য। ঔপনিবেশিক ক্ষমতার শাসনে আমাদের এই দেশে যে কী কী হয়েছে তাও সকলেই পড়েছেন, জানেন। সেই পরাধীনতার সময় থেকেই তো স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম। বস্তুত, ঔপনিবেশিক আধুনিকতার হাত ধরেই ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে আমাদের এই দেশের উঠে দাঁড়ানো। সাতচল্লিশের স্বাধীনতা। অসহযোগ, নেতাজী, ভারত ছাড়ো, গান্ধীজি, নেহড়ু, দাঙ্গা, ভারত ভাগ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা হল, এই যে দেশ স্বাধীন হল, এই দেশের সঙ্গে আমাদের কি আলাপ ছিল কখনও? না কি যে দেশ স্বাধীন হল, সেই দেশের মানুষদের কখনও আলাপ হয়েছে স্বাধীন সংযুক্ত ভারতবর্ষের সঙ্গে?

আরও একটু স্পষ্ট করে বলি, ভারত কবে ভারত ছিল? আর কবেই বা এ দেশের সাধারণ মানুষ স্বাধীন ছিল? রাজতন্ত্রের হাত ধরে বিভিন্ন রাজবংশের এ দেশে শাসনের ইতিহাস তো আমরা ভুলে যাইনি। তো তাঁরাও তো ছিলেন ক্ষমতার প্রতিভূ। সাধারণ মানুষের নয়। কখনও চোল, কখনও মৌর্য, কখনও গুপ্ত, কখনও পাল-সেন, কখনও সুলতানি শাসকদের হাতে আবার কখনও মুঘলদের হাতে ছিল এ দেশের শাসনভার। আমরা কি স্বাধীন ছিলাম? সাধারণ মানুষ কি স্বাধীন ছিল? কর নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে, অত্যাচার নিয়ে, ধর্ম নিয়ে অত্যাচার হয়নি? সাধারণ মানুষকে করের পর কর চাপিয়ে নিষ্পেশিত করেনি শাসকরা? আমরা কি তখন স্বাধীন ছিলাম? আর ইংরেজরা সাদা চামড়ার বলে পরাধীন হয়ে গেলাম? ইংরেজরা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শাসক বলে আমরা ছিলাম পরাধীন, আর দেশীয় ক্ষমতার শাসনে ছিলাম স্বাধীন? কবে? কবে আমাদের দেশপ্রেম ছিল? দেশপ্রেম কী বস্তু? দেশপ্রেমের দিনমজুররা না খেতে পেয়ে মারা যায়। গত প্রায় হাজার বছরের ভারতের ইতিহাস কৃষকদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস, শিক্ষাকে, সংস্কৃতিকে রাজ-অনুগ্রহে শাসনের ইতিহাস। তাহলে আমরা শুধু সেলিব্রেট করব ভারত ভাগ করে ইংরেজদের ইউরোপে চলে যাওয়ার দিনটিকে? ইংরেজরা কি আদৌ এ দেশ ছেড়ে চলে গেল?

দেশ এবং দেশপ্রেম- এই দুই বিষয়ই ভীষণ সংশয়ের। ভালো করে ভাবলে দেশের কোনও অর্থ নেই একটা বানানো জাতীয়তাবাদী উগ্রতা তৈরি করা ছাড়া। ইংরেজদের সময়ে প্রেসের উপর নিষেধাজ্ঞা নামানো হয়। সাংবাদিকদের কলমে নেমে আসে শাসকের ব্যারিকেড। সারা দেশ গর্জে ওঠে। কিন্তু এখন? গৌরী লঙ্কেশ, সুজাত বুখারিকে হত্যা করা হয় প্রকাশ্যে। আমরা নিশ্চয় সফদর হাশমির কথা ভুলে যাইনি। সেনসরশিপের নামে মানুষের সৃজনশীলতার স্বাধীনতায় ব্যারিকেড নামিয়েছে এখনকার এ দেশের গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সামন্তপ্রভুরা। আর আমরা নিঃশর্তে আগে যেমন ক্ষমতাকে সমর্থন করতাম, রাজার নামে জয়ধ্বনি দিতাম, তেমন ভোট দিয়ে ভাবছি গণতন্ত্র রক্ষা করছি, আমাদের স্বাধীকার রক্ষা করছি।

আসলে এই স্বাধীনতা-দেশপ্রেমের এই খেলার সময়কালটাই আর নেই। আপনাকে স্বাধীন করে রেখেই পরাধীন করে রাখতে চায় এখন ক্ষমতা। স্বাধীনতা-পরাধীনতার খেলাগুলি এখন অনেক বেশি সূক্ষ্ম। আপনার কি সত্যিই যা মনে হয়, তা বলার ক্ষমতা আছে? ভাবুন তো, আপনি যদি বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর কথায় না ওঠেন বসেন, না তাদের প্রকাশ্যে স্তুতি করেন, তবে কিছু বেশি সামন্তপ্রভু-স্বরূপ লোকেদের বিষাক্ত নজরে পড়ে যেতে পারেন। তখন কিন্তু আপনি কারো পক্ষ না নিলে নিজেই লুপ্ত হয়ে যেতে পারেন। ব্রাত্য বসুর উইঙ্কল টুইঙ্কল নাটকে একটি ডায়ালগ স্পষ্টত মনে আছে- পক্ষ নিন সব্যসাচী, পক্ষ না নিলে আপনার অবস্থা হবে রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো। কিন্তু এই অবস্থাটি কি সত্যিই স্বাধীন অবস্থা? আপনার পছন্দ-অপছন্দ নির্ণয় করে দিচ্ছে কিছু বহুজাতিক কোম্পানি। আপনার রাজনৈতিক পছন্দ যদি ক্ষমতার সংসদীয় পছন্দের সঙ্গে না মিলে যায়, তবে আপনি দেশদ্রোহী। আপনি নিজের ভাষাকে, নিজের জাতিসত্ত্বাকে, নিজের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে বিচ্ছিন্নতাবাদী। যদি মনে করেন আপনি ক্ষমতাবান শাসকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মতপ্রকাশ করে যাবেন, তবে আপনি মাওবাদী। যদি প্রশ্ন তোলেন স্বাধীন ভারতে এত কৃষকের আত্মহত্যা কেন, তাহলে আপনি দেশপ্রেমিক নন। যদি দাঙ্গাবাজকে দাঙ্গাবাজ বলেন প্রকাশ্যে, তাহলে খুন হয়ে যেতে পারেন। যদি প্রশ্ন তোলেন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে, তাহলে আপনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

দেশপ্রেমের নামে এই যে চোরা ফ্যাসিবাদ চলে, যে ফ্যাসিবাদ সেনাবাহিনী ঢুকিয়ে হত্যা করে এই দেশের কতিপয় গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানো মানুষকে, যে দেশে ভারত মাতা কী জয় ধ্বনি দিতে দিতে যোনির ভিতরে তরবারি ঢুকিয়ে বের করে আনা হয় ভ্রূণ, সে দেশ কি আদৌ স্বাধীন? যে দেশে সমস্ত সিদ্ধান্তই নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাবানেদের উপর। তারা যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার মাথার উপর চাপিয়ে দিতে পারে শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, টাকা থেকে সংস্কৃতি-- সমস্ত বিষয়ে তাদের পছন্দ। তারা যাকে তাকে যে কোনও বিষয়ে অপমান করতে সিদ্ধহস্ত। সাধারণ মানুষের এ দেশে কোনও মান সম্মান আছে? কখনও তারা হয়ে যাচ্ছে উদ্বাস্তু, কখনও তাদের কিছু অশিক্ষিত জনপ্রতিনিধি বলছে - গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব, কখনও কৃষকদের উপর পুলিশ গুলি চালাচ্ছে, কখনও জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, কখনও বা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপ্ত্রের দাম। কে স্বাধীন? কী পার্থক্য এই গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের আজ থেকে ৭১ বছরে আগের ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের বা তারও আগে মুঘল আমল বা সুলতানি আমল বা দেশীয় রাজতন্ত্রের সময়গুলো থেকে? যে দেশে মানুষের ইচ্ছে, মতামত এবং নিজেদের সিদ্ধান্তের কোনও অর্থ নেই, সেই দেশের স্বাধীনতা শব্দটিই কি ভীষণভাবে হাস্যকর নয়?

মুক্তি তো হয়নি আমাদের অনেক কিছু থেকেই। এই সেদিন দেখলাম যাতে দুর্ঘটনা না হয় তার জন্য রেললাইনকে পুজো করছেন এ দেশের কিছু মানুষ।  এ দেশে এখনও শিক্ষার আলো পড়েনি দেশের বিভিন্ন অংশে। প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ খাবার পাননা, স্বাস্থ্য পরিষেবা পাননা, শিক্ষার জন্য স্কুলও পাননা।কিন্তু প্রতিরক্ষা খাতে চলে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা। আজ্ঞে আমরা স্বাধীন দেশ। আমাদের কাঁটাতার রক্ষা করা এক মহৎ কার্যের মধ্যে পড়ে। তার জন্য যুদ্ধ এক পবিত্র কর্তব্য। যুদ্ধ না করলেও, এই যুদ্ধ লাগবে্, আবার  এলওসি, বর্ডার, লকশ- এর মতো কিছু ফিল্মের চিত্রনাট্য পেয়ে যাবে বলিউড। কেন? না সেগুলি দেশপ্রেমের সিনেমা। কীসের দেশপ্রেম? কীসের দেশ? আর কীসের স্বাধীনতা? না হয়েছে সাধারণ মানুষের ইতিহাস লেখা, না এসেছে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা। কারণ সাধারণ মানুষের আসলে কোনও কাঁটাতার নেই, কোনও দেশ নেই। তেমন ক্ষমতারও কোনও কাঁটাতার নেই, দেশ নেই। ক্ষমতা হল ক্ষমতা। ক্ষমতার একটাই কাজ, লক্ষ্য রাখা, শাসন করা। দুনিয়ায় বিশুপাগলরা কখনও স্বাধীন হন না। উল্টোদিকে রাজাও আসলে পরাধীন-ই থাকেন। আজ যদি আপনার আধার কার্ড, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট সহ সমস্ত হারিয়ে যায়, একটা প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রের কাছ থেকেও আপনার সমস্ত ডিটেলস মুছে যায়, তাহলে কি আপনি কোনও পরিচয় দিতে পারবেন? না কি হয়ে যাবেন নো ম্যান্স ল্যান্ডের মানুষ? তখন আপনার দেশপ্রেম অটুট থাকলেও, দেশের আপনার প্রতি প্রেম অটুট থাকবে কী?

দ্বিতীয় আরেকপ্রকার স্বাধীনতার কথা আমার মনে হয়, আর তা হল নিজের সমস্ত ধারণার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা। ধর্ম হোক, সংস্কার (কু বা সু), সংস্কৃতি, ভাষা, দর্শন, শিল্প, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, বাক, লিপি এমনকী ইতিহাস সম্পর্কেও যে যে কথাগুলি আমরা জানি, সেই সব কথাগুলি থেকে স্বাধীন হওয়াটিও জরুরি। শুধুমাত্র রাষ্ট্র আমাদের অধীন করে রাখছে, বললে, অধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা তো নিজেদের ধারণার দ্বারাই অনেক সময় অধীন। আমাদের আচরণ, সেই সব অধীনতার কাহিনি। সেই সব ধারণা থেকে মুক্ত করার কাজটি কিন্তু সমষ্টিগত ভাবে আদৌ হয় বলে আমার মনে হয় না। এই স্ব-অধীন হওয়াটি সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন। কে আমাদের মুক্ত করবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলি থেকে?  আমাদের ব্যক্তিপুজোর দেশ, অবতার-ধারণার দেশ। আমরা আশা করে বসে থাকি, কেউ না কেউ আসবে আর ম্যাজিকের বশে ঢিসুম ঢিসুম করে সব  পালটে দিয়ে চলে যাবে। তাই ধারণাগত পরিবর্তন যাঁরা এনেছেন এ দেশে, তাঁদের আমরা প্রথমে গ্রহণ-ই করতে পারিনি, হিংস্র ভাবে বর্জন করেছি। পরে যখন আস্তে আস্তে তাঁদের পরিবর্তিত ধারণাতেই সমাজ চলেছে, তখন তাঁদের বসিয়েছি দেবতার আসনে। অভ্যেসকে বর্জন করে নতুনকে গ্রহণ করার স্বাধীনতা আমাদের নেই। আমরা সমাজের ও সময়ের গ্রহণ-বর্জনের অধীন।  যেমন একজন নতুন কথা বলা শিল্পী-লেখক- ভাবুক একাই নতুন কথা বলে চলেন, কারণ তিনি এই ভাবনার অধীনস্থ হওয়াটিকে একাই বর্জন করেন, তেমন, একজন সাধারণ শ্রোতা-দর্শক- গ্রাহক ( রেসিপিয়েন্ট অর্থে)-এর কাছেও কখনও একাই নতুনকে গ্রহণ করে অভ্যেসের অধীনতাকে বর্জন করার সাহসটুকু দেখানো উচিত।

জানি না, মানব সমাজের চরিত্রগুলির পরিবর্তন ঘটিয়ে কোনওদিন এমন সমাজ আসবে কিনা, যেখানে স্ব-অধীন হওয়াটাই মূল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা হল কিছু ক্ষমতার হাতবদলের গল্প। কোনও সময়েই আমরা স্বাধীন ছিলাম না। আগে মুঘল, গুপ্ত, চোল তো পরে ইংরেজ, আর তার পর কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূল-সিপিএম- ভারত নামক রাষ্ট্রের সংবিধান।

রাজনৈতিক স্বাধীন হব, না ব্যক্তি মানুষ হিসেবে স্ব-অধীন? মনে পড়ে যায় -
 Freedom is a word I rarely use
Without thinkin', mm hmm
Without thinkin', uh huh
Of the time, of the time
When I've been loved  (Donovan)



No comments:

Post a Comment

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...