ক্রোড়পত্র
ACT
I SCENE I
'পকেটমার হইতে সাবধান লেখা!' বাসে
যথারীতি আধ চল্লিশের অকাল যুবক কলেজ ছাত্রীর গায়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের পৌরুষ
ঠেকিয়ে রেখেছেন দেখেও আমরা পনেরোই আগষ্টের পতাকা উত্তোলন শেষে নারী স্বাধীনতার
ধ্বজা উড়িয়ে বাড়িতে ও রাস্তায়, পুকুরে ও
ঘাটে, রেশনে ও ফ্যাশনে সবেতেই নিজের
মেয়েকে সাবধান করে দিচ্ছি এই বলে , ' তোর কি দরকার ছিল ঐ লোকের গালে থাপ্পড় মারার।
রাস্তায় বেরুতে পারবি তো আর ? ছি ছি এই মেয়ের জন্ম দেখার আগে মরণ হল না কেন! ভিড়
বাসে অমন ঠেকাঠেকি একটু আধটু হতেই পারে সব মেনে নিতে হয়', বলে মেয়েটির দিকেই আঙুল
তুলে বুঝিয়ে দিচ্ছি তার স্বাধীনতা ঐ বই এর পাতা পর্যন্তই। তারপর সাইকেল থেকে নেমেই
পানের দোকানে এসে ধাঁ করে A মার্কা সিনেমার পোষ্টারে চোখ রেখে দাঁত কেলিয়ে নিচ্ছি। দাঁত কে লিয়ে কোলগেট
হ্যায় অউর নারী স্বাধীনতাকে লিয়ে অনলি ডায়লগ!
ACT I SCENE II
যে ছেলেটি ভূমিষ্ট হল আজ রাতে সে
পেয়েছে ছাড়পত্র এক-- এমন এক ইউটোপিয়ার গল্প লিখতে লিখতে আধুনিক কবি ভাবলেন কলমের
ডগেই আছে স্বাধীনতার উৎস অথচ পাড়াতুতো নেতা এসে জানালেন, 'তুমি যেন আজকাল কিসব
লিখছ ফেসবুকে টেসবুকে, শোনও পাড়ায় থাকতে
গেলে এরপর থেকে নিজের প্রোফাইল পিক দিতেও
অনুমতি নিও বস'
পাড়ায় ঢুকলে ভোটার করে দেবে বলেছে
পাড়ার 'লতপতে পতাকারা'--- কাকা এ
স্বাধীনতা শুধু আমার, এ স্বাধীনতা শুধু ডিকটেশনের আর এ স্বাধীনতা ভোটের পরে
প্রতিশ্রুতি ভুলে যাওয়ার।
ACT I SCENE III
Fair is foul, and foul is fair
Hover through the fog and filthy air
আমাদের জীবনে ও জীনে এখন শুধুই 'আধার',
আর যে বিধবা ঠাকুমার ছেলে মা কে রেখে চলে গেছে নিউ গড়িয়ার নিউ ফ্ল্যাটে তার জন্য
অপেক্ষা করে আছে রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কিয়স্ক, গ্রীন চ্যানেল, নেট ব্যাঙ্কিং ও
বিবিধ লাইন। তিন মাস পরের টাকা যখন এসেছে বলে হাপিত্যেশ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে তখন
অটোমেটিক পাসবুক আপডেটিং মেশিন কানে কানে বলে দিচ্ছে, ' ওহে অশিক্ষিত বৃদ্ধা নাউ
ইউ আর লিভিং ইন আ ডিজিটাল কান্ট্রি অ্যান্ড ইউ শুড কিপ আপ দ্য মিনিমাম ব্যালান্স
নেক্স টাইম'। আর উগলে দেওয়া পাসবুকের পাতা জানিয়ে দিচ্ছে ৪৩২ টাকা ব্যালেন্স থেকে
কেটে নেওয়া হয়েছে জরিমানা বাবদ। স্বাধীন দেশের 'কোট' না পরা মানুষের স্বাধীন
অ্যাকাউন্ট থাকতে নেই তা যতই জন ধন যোজনা হোক না কেন এ কথাটা পরবর্তী সংশোধনীতে
দিয়ে রাখবেন মঁসিয়ে সংবিধান।
ACT II SCENE I
(দর্শক চাইলে গ্রীনরুমে এসে দেখে যেতে
পারেন কোনও শাহজাহান নয় আসলে ও পাড়ার ন্যাড়া বিড়ি খেতে খেতে পার্ট মুখস্থ করছে। এই
সময়টুকুই তার স্বাধীনতা। )
(এখানে নির্দেশক একখানা কোর্ট পরে এসে
মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলে চলেছেন কিছু কথা । টিকিট কেটে ঢুকতে যখন
বাধ্য হয়েছেন তখন নাটকে কে অভিনয় করছেন তা দেখার দরকার বা আপত্তি জানানোর সময়
সু্যোগ বা পপকর্ন কেনার অধিকার নেই। তাই মন কী বাত মন দিয়ে শুনে যান)
আমাদের দেশে দু'প্রকারের মানুষ আছেন।
কোট পরা আর কোট না পড়া। দু'রকম পোশাকের কারণে তাদের পায়খানা পেচ্ছাব মায় খাওয়া
শোয়া বা করার অধিকার দু'প্রকারের। এখন আসুন একদান লুডো খেলি আর ভাবতে থাকি কার
কোটের অধিকার কেমন আর কোট না থাকার কারণে সাধের স্বাধীনতার কাঁথায় কার আগুন
লেগেছে।
কোট না পরলে আপনিই ব্যাঙ্ক। আর ঋণ
খেলাপির প্রভূত অধিকার আপনার বাসস্থানগত । আমেদাবাদের স্বাধীনতা আর হেদুয়ার স্বাধীনতা
এক নয় কখনও। তাই শুধু কোর্ট পরলেই হবে না , তার উৎস ও ব্যবহার স্থলের ওপরেও আপনার
চলন বলন খ্যাটনের অধিকারের তফাৎ হবে।
আর যারা কোর্ট পরে না তারা এই দেশের
লোকই নয়। তার আধার আছে যে! তো? কি হয়েছে আধার আছে বলেই এই দেশের লোক মানতে হবে
নাকি! আমরা আমেরিকার গ্রীন কার্ডের মত গেরুয়া কার্ড দেব তবেই এখানে থাকার খাওয়ার
শোওয়ার আর করার স্বাধীনতা পাবেন । ততক্ষন ঐ লাইন অব কন্ট্রোলে দাঁড়িয়ে থাকুন। আহা কন্ট্রোল মানে
রেশন দোকান নয়! শালা এই মধ্যবিত্তদের নিয়ে মহা জ্বালা তো। কতবার বলেছি 'লকড়ি' দিয়ে
চুলা জ্বালাবে না, এল পি জি দিচ্ছি জ্বালাও খাও শুধু কন্ডিশনশ অ্যাপ্লাই ...
ভর্তুকি হামভি ছোড়েঙ্গে আপভি ছোড়েঙ্গে। ' মিল কর জ্বালাও। ভর্তুকি ছোড় দো' খাবে তো
অতো হ্যাপা কিসের । ফোর জি হ্যায়। যিতনা মন চাহে বাত কর লো। কিঁউকি তুম তো আজাদ
হো। ইয়ে আজাদি কভি ঝুটা নেহি হোঙ্গে। কোর্ট পরা লোকের কথা রে বাপ। এস ই জেড থাক
তুমি ভর্তুকি ছেড়ে দাও, লকড়ি ভি ছোড় দো। মিল কর চুলা জ্বালাও। ভুখা লোক মিছিল করুক।
তুমি স্বাধীনতা আধ সেদ্ধ কচু খাও ভাতে মেখে।
( নির্দেশক নেমে গেলেন। মঞ্চ ফাঁকা। একটা সাদা পতাকা নিয়ে ন্যাড়া উঠে
আসে । ইচ্ছেমত
রঙ লাগাতে গেলে মেফিস্টোফেলিস ও তার দলবল কোর্ট পরে এসে ন্যাড়াকে টেনে নিয়ে যাওয়ার
ভঙ্গিমা করে। দৃশ্যটি ফ্রিজ হয়।)
ACT III SCENE I
একটি ছোট্ট স্কুল। সাদা ও সবুজ পোশাক
পরা কয়েকটি ছোট ছোট ছেলে মেয়ে তেরঙ্গা পতাকা হাতে লাল মোরামের রাস্তা ধরে হেঁটে
যাচ্ছে।
পিছনে মাস্টারমশাই তিক্ষ্ণ কণ্ঠে ডাক
দিলেন, 'বন্দেমাতরম...'
ছেলেমেয়েগুলি ফোকলা দাঁতে ফিক করে হেসে
ফেলে বলল , 'দয়... হিন্দ...'
আসলে স্বাধীনতা হল একটি মাকাল ফল অথবা কাঁঠালি
কলা।
এর কোনও নিজস্বতা নেই। কার স্বাধীনতা
তার কোনও ডেফিনিশনও নেই।
একটি তিন অঙ্কের নাটকের বিভিন্ন
দৃশ্যের মত আছে শুধু এক্সিট ও এনট্রি।
ভারত একটি মজার দেশ। এখানে কোট পরলেই
খাতির হয়। কোট না পরলে নাসিরুদ্দিন।
মুশকিল হচ্ছে কে কোট পরবার অধিকার
অর্জন করবে তা ঠিক করে দেবার লোক আছে।
সে স্বাধীনতাও আপনার নেই।
শুধু যতদিন ঐ ছেলেমেয়েগুলো ফোকলা দাঁতে
' দয় হিন্দ' বলবে আর লাড্ডু পেতে হাত মেলে ধরবে ততদিনই স্বাধীনতাটুকু কেবল তাদের
নিজেদের।
আসলে স্বাধীনতা আক্কেল দাঁতের মতো।
স্বাধীনতার বোধ জন্মালেই আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা অনুভূত হবে।
তার থেকে খান ঘুমোন আর ......
ড্যাশের স্বাধীনতার জন্য হেদিয়ে মরে
লাভ নেই।
No comments:
Post a Comment