Thursday, August 9, 2018

গুচ্ছ কবিতা দিশারী মুখোপাধ্যায়






ঠিক ঠিকানার বাড়ি 



৪১)

কামড়াচ্ছি । হাত কামড়াচ্ছি। পা কামড়াচ্ছি। 
নিজের হাত পা নিজেই কামড়াচ্ছি। এপাশে নর্দমা । ওপাশে ভাগাড় । পিছনে এডিস । সামনে অসংখ্য দুঃশাসন ।বাইরে রক্তের বন্যা। ভিতরে দুরারোগ্য ক্ষত । 
পুড়ছি । কাঠে পুড়ছি । কয়লায় পুড়ছি । সৌরতাপে । 
কাঠে কয়লায় সৌরতাপে ও অশান্তিতে । 
যজ্ঞের জন্য আগুন জ্বেলেছিল আহুতি সেবনে ব্যস্ত । 
তোমার ছেলে , আমার মেয়ে এখন আহুতি । তোমার বন্ধু , আমার স্ত্রী । তোমার হৃদয় , আমার মস্তিষ্ক । 
রামের ভাই , রহিমের দাদা । আহুতি বাড়ছে । আগুনও বাড়ছে । আয়োজকদের বাড়ছে পুঁজি । 

দৈববাণী হয়েছে । আমি শুনেছি । তুমি শুনেছ । 
সকলেই শুনেছে । বলতে ভয় পাচ্ছি আমরা । সেই বাণীর মর্মার্থ পুঁজিতেও পুঁজ । পুঁজির দেহেও দেখা যাবে ক্ষত । পুঁজ গড়াবে । জ্বালা করবে । জ্বলবে । 


৪২)

তোমার ওখানে সূর্য । তোমার ওখানে রোদ । ওখানে 
আলো । আমার এখানে খাঁখাঁ । এখানে লু । নিশুতি । 
একটা রাস্তা । দুদিকে দুটুকরো আপেল । একটুকরো 
পচা । অন্যটা ভাল । অথচ দুটোই মরা । লাস । 
সূর্য থেকে ঠিকানা মেলে । সূর্য থেকেই নৌকাডুবি । 
তোমার জন্য ঠিকানা । আমার সলিল-সমাধি । 

জলে মরুতে প্রণয় চায় । অকুস্থল তোমার ড্রয়িংরুম । 
রঙে তুলিতে ডিভোর্স হয় । হসপিটালের মর্গ দরকার । 
জায়গা চাই । আমি উদ্বাস্তু হই।পৃথিবীর সব প্রীতিভোজ সুসম্পন্ন হয় । সমস্ত অভ্যর্থনায় থাকে লালগোলাপ । 

সূর্যের নাম আপেল । আপেলের নাম সূর্য । মর্গ একটি 
বিভ্রান্তি কেবল । 



৪৩)

খোলা রেখেছি । সমস্ত জানালা । সব দিকের । আলো 
আসার আশায় । উত্তাপও স্বাগত । স্বাগত ঝড় ।সকলে আসুক । 
রাতের টেবিলে খাবার । মিলনের জন্য অধীর । ঘ্রাণ ও বর্ণ সহ । রসনা রসায়ন চেনে । জৈব ও অজৈব স্বাদ 
ডাকে । ডাকে বিন্দু বিন্দু । বিন্দুতে সাগর । সাগরের নিচে মৈণাকের চূড়া । 
বিবস্ত্র হয়েছি । ত্বকের আচ্ছাদন ছিঁড়েছি । খুঁড়েছি মাসের আস্তরণ । অস্থিতে সন্ধান অস্তি ও নাস্তির ।
সময় চলে যাচ্ছে । যাবার পথও লাগাম সহ । লাগামকে বিশ্লেষণ কর । মন্থন যেন নিজেকে চেনে । দন্ড যেন নিজেকে । আর সময়ময় বাজুক আমি । আমি চিনুক নিজেকে বহুবচনে । 


৪৪)

দিন ঘন্টা পলের হিসাব । আকাশের মধ্যে জলের হিসাব । জলের মধ্যে আকাশ । বাতাসের মধ্যে শব্দ । শব্দের মধ্যে ঘ্রাণ । ঘ্রাণের মধ্যে চোখ । কান্না । লবণ । 
মিষ্টতা।এইসব হিসাব গুছিয়েছি । গুছিয়ে বসে আছি ।
আঁতুড়ের হিসাব । পলাশের।বার্ধক্যের । হিসাবের চুল ।
চুলের ভগ্নাংশ নিয়ে বসে আছি । 
সোনার কাঠি আনো।হিসাবের গায়ে ঠেকাও । ভুলভ্রান্তি
যা আছে হিসাবে তাকে ইতিবাদী কর । রক্ত থেকে রস নাও । রস থেকে রক্ত টেনে নাও । হিমোগ্লোবিন নাও । 
নাও অণুচক্রিকা । সব নাও।  শবটুকুও নাও । অনুগ্রহ 
করে হিসাবকে বৈধতা দাও । 
দিন ঘন্টা পল চেয়ে আছে।চেয়ে আছে পল পল। ঝলমল হয়ে উঠুক ভদ্রাসন। দলিল সহ । পরচা সহ । মিউটেশন সহ । 


৪৫)

আলো জ্বালতে গেছি । জ্বালাতে পারিনি । বরং নিভিয়ে ফেলেছি । মন খারাপ হয়ে গেছে । অপদার্থ আমি । আলো জ্বালাতে পারিনি । জ্বালাতে পেরেছি 
তোমাকে । জ্বালাতন হলে তুমি । তন থেকে মন তুলে নিলে । সেই তনে আমি সাধনা বানাবো । সাধ্যি করে আমি না কে হঠাবো । পড়ে থাকবে সাধ । হয়তো পরমাদ । তবু সাধ নত হবে না । নম হবে না । তুলসীদাস বা প্রেমচাঁদ কেউ একজন সরব হন । নিভাও নিভাও । মুখের কথা নিভাও । পদার্থ হবার চেষ্টা করো না । রঙে রসে প্রাণে অপদার্থ হও । 
তন পুড়ল না দীপ্ত হলো দেখি।মন ছাড়া তন জ্বলে না । 

No comments:

Post a Comment

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...