Friday, August 10, 2018

গুচ্ছ কবিতা রঙ্গীত মিত্র






হাত বদল


ছেলেটি ছবি নিয়ে আসে।
তার গা দিয়ে আড়াল জল
আয়নায় যেন লেগেছে বারুদ।

আমি ধাক্কা মারি ক্যামেরার লেন্সে
লেন্সে ইতিহাস লেগে আছে।

ইতিহাস ফেলে দেওয়া গোলযোগ
ইতিহাস প্লাস্টিক-সার্জারি।

দরগার সামনে দিয়ে প্যারাডাইসে চলে যায় অটো
প্যারাডাইস পাহাড়ের উপরে।

পাহাড়,প্ল্যাস্টিকে মিশে গেছে
প্ল্যাস্টিকের কোনো আধার-কার্ড নেই।

চুপ। চুপ করে থাকো।

পৃথিবীর হাত বদল চলছে...



দেশ

পাশের বিছানা থেকে  তুলো উড়ে আসছে
দরজার নিচ দিয়ে ইঁদুর।
ঈশ্বরের দরজা এক হলেও
নাম বিভিন্ন।
পাতা ফেলে রোদ অবাক
স্বপিংমল অপেক্ষা নামক নেট-ওয়ার্কে
একশো টাকার নোটে
ভালোবাসার ইমপ্যাক্ট স্কোর শূন্য।

শূন্যের পিছন পিছন আমাদেরও
দেশ ছাড়তে না হয় !




মাটি ভিজে যাওয়া গান...


নেতাজীর ছবি পোকায় খেয়ে যাচ্ছে।
                      মাখনের গলে যাওয়া শরীর
ক্ষমতা বিশ্বাসঘাতকতা।

বইকে উলটো দিকে রেখেই

ভেঙে পড়ছে আকাশ

আকাশের দিকে তাকিয়ে
কারখানা

একজন পাক্কা ঘরোয়া ন্যাকা লোক
আর
তার মধ্যবিত্ত মস্তিষ্ক।

ফেলে দেওয়া হৃদয়ের থেকে
প্রতিশ্রুতিগুলো বেরিয়ে আসছে।

ইজ অফ ডুইং বিজনেসের বিষ খেয়ে
তেলেঙ্গানায়
ভোটার লিস্ট থেকে হারিয়ে গেছে,একদল কৃষক।

বন্ধুকের তুলনায় ব্যালট নাকি ধারালো।

মাটি ভিজে গেছে গানে...


ছোবল

যিশুর ক্ষমা চাওয়ার মতো
আমার শিক্ষকের মুখ  
ধর্মিও উন্মাদের মুখোমুখি
পশ্চিমা-বায়ু।
জিন শিখে গেছে
অপগুণগুলো নকল করার পদ্ধতি।
ঘেন্না করে। ঘেন্না করে।

তবু তাকেই মাথায় তুলে নাচি।

সাপের ফণার মতো আমার মাথা
মাটিতে পড়লেই ছোবল মারবো।


সৈন্য



আঘাত করো আঘাত করো পাহাড়ের গায়ে
আঘাত করো আঘাত করো সমুদ্রে
আমার রক্ত মিশে যাক বিকেল বেলায়
অন্ধকারে প্রেম নেমে আসুক,দু'জনের
তাও বৃষ্টি মাতাল হয়
বিদেশি গাড়ি হেঁটে যায়।
তুমি মজা পাও
তুমি ভাবো আমাকে,অযোগ্য
আমার শরীরের রোগ
শুকনো মাঠের মতো
আমার শরীরের রোগ
জমে ওঠা ধর্মবোধ,পুরুষ-তন্ত্র।
আমার ঘেন্না হয়,মুখোশ
আমাকে ভুল বুঝে
ষড়যন্ত্র নেমে আসে ঈগলের মতো।
আমি মৃত্যুর স্বপ্ন দেখলেও
উপকার ছেড়ে যেতে পারি না।
আমি এখন কাঠের বাক্সে বন্দি
তোমারাও হাত তুলে দিয়েছও।
তোমাদের ফেলে আসা রাস্তা দিয়ে
সূর্য নয়
অন্য নক্ষত্রের আলো নিয়ে আসবো বলে
ধুলো মিশিয়ে সৈন্য তৈরি করছি।

 আনন্দ 
 

তিন তলায় গিয়ে দেখছি 
দোতলা 
আপডেট না হওয়া অ্যান্টি-ভাইরাসের মতো
হিংসে সত্যি কথার ভয়ে
সোফার তলায় ঢুকে আছে।
আর খুব হর্ন বাজাচ্ছে গাড়িগুলো
থেমে থেকে,আবার কাঁপছে
তার আওয়াজে 
যেন সমুদ্র –স্রোত থেকে উঠে এসেছেন মৎস কন্যা।

তার চোখের মধ্যে দিয়ে নিজের
হারিয়ে যাওয়া...
আনন্দ হচ্ছে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা...





কিসের এত তাড়া তোমার ?

পায়ের উপরে সে ছিলও 
সে ছিলও কিছুটা বেরিয়ে ।
এখানে টানা রিক্সা দেখা যায় না
এখানে ট্রাম লাইন দেখা যায় না ।

মৃত ঘোড়ার মত রাস্তাটা সোজা 
গরমকালের শিশির পড়ার দিকে।

ধুলো, বায়ু-দূষণ 

অংকেতে একশোতে নব্বই না পাওয়ার জন্যে
শুধু ভাতে কাঁকড় লেগে আছে
ব্যবহৃত স্মৃতির মতো।

'কিসের এত তাড়া তোমার ?'




দালাল


আমাকে নিয়ে সবই বুঝতে পারি,অথচ 
আমি কাকে কি বলতে হয় তা আমি জানি না।
আমার যৌনাঙ্গের আকৃতি আমিই জানি
বাকীটা নিষ্ফল কামনা।

অভিযোগ ট্যাক্সি চেপে যাচ্ছে
আধুনিকতা অন্যের বান্ধবী।

আমার কি নেই
আমার কি আছে
জানি না।

আমি আপনার মতো দু’মুখো সাপ নই।

দালাল,শালা... 

কেউ


নির্জন রাস্তায় চোখ পেতে আছি
অটোতে পিছলে যাচ্ছে  দুপুর-বেলা।
জিনসে ঘষছে পায়ের জুতোর নিচের অংশ
মাংসের দোকান তাকিয়ে আছে
জিনসের চেনে মরচে ধরছে
সম্পর্কের মতো।

আমি শুধু ভয় পাচ্ছি

কেউ দেখে ফেললো কি না?


বাঁদর


কেউ কাছের নয়।
পয়সা নামক মুহূর্ত 
বেদন-স্প্রে নিয়ে 

সোফায় ঘুমচ্ছে।

কালো কাকটা প্রতিবেশীর দূত 

রায়টের শব্দ , রাষ্ট্রের  শব্দ,ধর্মের শব্দ,বিপ্লবের শব্দ

হত্যা করে।

শুধু ভয় আর অনিশ্চয়তা নামক দু’টো শেয়াল
সমাজের কথা ভাবে।
নিজের কথা ভাবে।

এইভাবে সামাজিক হয়ে উঠছি। সামাজিক বাঁদর। 
 












2 comments:

  1. অসম্ভব ভালো কবিতা গুচ্ছ । কিছু কিছু জায়গা অবাক করে দেওয়ার মতো

    ReplyDelete
  2. khub bhalo laglo,apnar aamr lekha bhalo legeche,jene...

    ReplyDelete

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...