Thursday, August 9, 2018

গুচ্ছ কবিতা গার্গী সেনগুপ্ত





 লিথোগ্রাফি 

স্লেটের পাথরে  অভিমান লিখি,
মুছে ফেলি, ফের লিখি।
কতবার ভেঙেছি বিষাদ পাথর,
মুছেছি অক্ষর রাত্রির রুমালে
টুকরো স্লেটে  তবু ফের লেখা।
অশ্রুর অক্ষরে বেশ বোঝা যায়
কতখানি দুঃখ মেপে কতখানি
ফেলে রেখে গিয়েছে সময়।
ভালবাসা ধুয়ে দিয়ে,
অপ্রেম লিখে রেখে গেছে
                  মুহূর্ত আখরে।
কান্না  মুছে ফের উঠে বসি
এবার লিখব কিছু অস্ফুট চেতনা
ব্যথা যত গাঢ় হয়
উপশম থেকে যায় ততই অধরা।
বুঝি করপদ্মে রেখেছিলে 
যা কিছু মলম, দাওয়াই--
মুঠো গলে পড়ে গেছে,তাই 
স্লেটময় লিখে যাই--
কান্নাঘন বিসমিল্লা সানাই।

                           
 জল

জল বলতে বিকেল বুঝি
   আকাশ মাথায় তুমুল মেঘ
      বেড়ার পাশে চতুর্দশী
         অপেক্ষাতেই প্রহর শেষ।   

নিজের দহন প্রশ্ন চিহ্ন
  সন্দেহকে খুব হাতড়ায়
     দুদন্ডের এই দুঃখযাপন
        নির্বাসনেই যন্ত্রণা ক্ষয়।
        
জল বলতে দুঃখ বুঝি
   বুক খুলে দেখি নির্নিমেষ
      কুয়োর জলে চাঁদ ডুবে যায়
          অপেক্ষাতেই রাত্রি শেষ।

দুঃখ জলে স্নান করে যাই
   স্নানের পাথর হোক পিচ্ছিল
      হাতড়ে বেড়াই শিকড় বাকড়
         হারিয়ে যাওয়া অন্ত্যমিল।

জল বলতে তোমায় বুঝি
    রঙ্গিন ফ্রেমে প্রেমের সুখ
        নিরন্তর এই দুঃখবিলাস
            কড়ি কোমল তোমার মুখ।
                                           

 নষ্ট নিসর্গ

ফুল খুঁজি, প্রেম খুঁজি পাখিদের বেগুনি ভেলভেটে
কুমারী নদীর  ঢেউয়ে খুঁজি দুর্বার শঙ্খকামনা
দিগন্তে সূর্য ঘুমালে
মেঘ নাচে পরিদের গোলাপি ডানায়।
চারদিকে নাগরিক জনকোলাহল
শ্রীহীন পড়ে  সব ছায়া পাতা বটসারি
প্রসাধনরহিত মুখ ম্লান নাগরিক ভীড়ে
ঘুরে ঘুরে খুঁজে চলি আমলকী পিয়ালের ঘ্রাণ 
ধান ক্ষেতে ও কিসের লাশ!
চাঁদ স্তব্ধ  শিশিরভোরে
নিহত পড়ে আছে কিশোরী কুমারী যোনি
ছিন্নভিন্ন শহুরে পরুষ হিংস্রতায়।

তীব্র দিবালোকে
ধর্ষিত পড়ে আছে একা নিসর্গ প্রতিমা।

                                     

বর্ণলিপি

ধুলোলিপি লিখব বলে
কবে থেকে ফাঁদ পেতে বসে আছি-
মন তবু উড়ন্ত পাখি
কিছুতেই ফাঁদে পা দেবে না।

জাল নিয়ে ফাতনা পেতে
ডিঙি নৌকায় চড়ে বসেছি,
এ নদী, ও নদী হয়ে
বর্ণমালা সমুদ্রে ঠিকঠাক
যেন জেলে হতে পারি।

জালে কি আটকালো
ছটফটে রূপোলী কাব্যশরীর?
কোথা তুমি হৃদপাখি-
ডাক ছোটে দূর দূরান্তে
ছন্দে ছন্দে ওঠানামা
চলে বর্ণমালা বর্ণমালা খেলা।
ফাঁদ,জাল পড়ে থাকে
এলোমেলো ত্রিপদী, পয়ার,অনুষ্টুপ
পাতা জুড়ে শুধু ছায়া ফেলে
মাত্রাভুল ছন্দের অসুখ।
                                  




শব্দস্তবক, কবিতার বোকে

এ শহরে রাত ঘন হলে
দিনকথাদের ম্যারাথন শেষ হয়
ফিরে আসে
ধোঁয়া ওঠা ডিনার টেবিল।
কথা বলে মৃদুস্বরে, সেরে ফেলে
 যাবতীয় বীতরাগ হিসেবনিকেষ।
তখনই তুমি উঠে আসো বিছানায়
নিঃসারে আঙুল ছোঁয়াও 
হিমবাহ গ'লে, বিভাজিকা উপত্যকায়
বয় হিমক্লান্ত নদী।
ভোরের আলোয় বাড়ি ফেরো,আর
ঠোঁটের ভাঁজে রেখে যাও তরতাজা
একগুচ্ছ শব্দফুল, কবিতার বোকে
আমার ফেরত চুম্বন।





1 comment:

  1. প্রত্যেকটি লেখাই মনের গভীরে কিছু ছাপ রেখে গেল। ধন্যবাদ কবি।

    ReplyDelete

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...