Friday, August 10, 2018

গুচ্ছকবিতা সন্দীপন চক্রবর্তী





বিগ ব্যাং

জানি না কোথায় কোন বিন্দু থেকে লেখা শুরু হবে
এখন দেখার বেশি কিছুই পারি না
দেখা কি তাকানো শুধু? আর কিছু নয়?
সবাই সবার দিকে তাকিয়ে এখন
নিরলস থুতু ছোঁড়ে, দাঁত আর নখে শান দেয়
কোনো সুস্থ আলো আর খোঁজে না এখন কেউ।
সব বিনিময় শুধু মাপা হয় আমিষাশী মুদ্রার নিরিখে
নিজের ঘাড়ের মাংস নিজেই খুব্‌লে নিয়ে ভাবে
আর কার ঘাড় বাকি? তোমার না তার?
উত্তেজনা-ঠাসা আর তেজস্ক্রিয় প্রতিটি মুহূর্ত –
অথচ মুহূর্তগুলি অতি দ্রুত ভেঙে যায় বিস্মরণে
চিহ্নমাত্র রাখে না কোথাও।
ঘোলাজল থেকে ধরা দু’একটি মাছ শুধু
কানে কানে এসে বলে যায় –
‘নিজেকে সন্দেহ করো, নিজেকে সন্দেহ করো...
কোথায় পৌঁছতে চাও তুমি?’
যে গন্তব্য লক্ষ্যে রেখে রাস্তা চলা শুরু হয়েছিল
সে শুধুই সরে সরে যায় আরও দূরে... 

যে কোনো সহজ স্রোতও চোরাটান রেখে যায় তোমার জীবনে


কলম

ভাষা তোমার আগুনফুল
শরীর থেকে শরীরে ধরে যায়
ভাষা তোমার খরস্রোত
কোনো আলিঙ্গনেই বাঁধা যায় না

ভাষা তোমার মায়াজন্ম
পোস্ট-অফিস, রুগ্‌ণ বাতায়ন
ভাষা তোমার সায়ানাইড
অন্ধকার আত্মঘাতী স্কোয়াড

ভাষা তোমার অসামাজিক
মৃত্যুমুখে শিউরে ওঠা আলো
ভাষা তোমার রতিপাথর
পরাগ, তার পরাগে জমে আছে


নেক্রোপলিস

স্মৃতিফলকের মতো জেগে আছে সারি-সারি ক্লান্ত বহুতল --
তার পেটে ব'সে এক বিষণ্ণ জোকার
দেখছে -- পাখির খোঁজে উড়ে যাচ্ছে খাঁচা
ভাষার ভিতরে বাঁচা মানচিত্র ছিঁড়ে খাচ্ছে
অযোনিসম্ভূত এই গর্ভফুল মিশে যাচ্ছে অন্নের আঠায়

অগ্নিজল গ'লে গিয়ে সাদা সাদা হাড়ের পাহাড় আজ 
ভাষার ফাটল বেয়ে নেমে আসছে ঘুমন্ত শহরে -- 
আর তার পেটে ব'সে কোনো এক বিষণ্ণ জোকার
লিখে রাখছে নিরুপায় অসহ্য উজ্জ্বল ওই আর্ত হাসিগুলো


পাগলাঘন্টি

চাতাল বানাই, এসো, কথাবার্তা হোক

কবিতা না হোক, ক্ষতি নেই। 
কবর খুঁজে না-পাওয়া যত স্বপ্ন, সব
গুটিগুটি পায়ে এসে বসুক এখানে
শব্দের ভিতরখাত বরাবর নেমে এসো, 
যেখানে তোমার শুধু চিন্তারা উজ্জ্বল 
সেসব চিন্তার দুধ জাল দিতে দিতে ক্রমে 
ঘন হয়, সর পড়ে, তরঙ্গ গুটিয়ে আসে একা --
কবিতা তো গ্যালাক্সিবহর

পাগলাঘন্টির মতো বেজে ওঠে আমাদের কবিতাপ্রয়াস


ব্যর্থ কাঁটাতার

সূর্য উঠে গেছে, আর টুকরো টুকরো ক’রে সে-ও
ছড়িয়ে দিয়েছে তার সমস্ত বিস্ময়... 
সমস্ত অক্ষর ওই সাদা পাতা থেকে উড়ে বসেছে দেয়ালে
যদি ওরা ফিরে আসে, তাহলে আগের মতো বসবে কি পরপর?
নাকি কোনো নতুন চেহারা?
সময় আশ্চর্য এক অস্থিরতা, ধারাবাহিকতাহীন, ঝাঁপ --
কোথায় যে তার শুরু, কোথায় বা শেষ
তারও আগে কী ছিল বা তারও পরে কী থাকবে প’ড়ে? 
জানি না সময় কোনো কথা বলে কিনা, আর কার সাথে বলে?
গর্ভবতী চাঁদ আজ মাথার উপরে উঠে এলে
আমার সমস্ত পুঞ্জ তাড়ি খেয়ে গামছা হাতে বসে থাকে একা -- 
যদি-বা আকাশ থেকে কোনো তারা খসে পড়ে, তাকে ধরে নেবে 
বানাবে রহস্যবোধ, হট্টগোল, স্বগতোক্তি, ব্যর্থ কাঁটাতার... 
খঞ্জনি বাজিয়ে ওই শীর্ণ ভিখিরিপথ নেমে যাবে স্বপ্নের ভিতর 




2 comments:

'রাষ্ট্র মানেই পরবাসী নিজের ঘরেতে ' : বেবী সাউ

ক্রোড়পত্র  " It's coming through a hole in the air,  from those nights in Tiananmen Square.  It's coming ...